অকুতোভয় এক মানবতার প্রতীক নাঈম : মোঃ খোরশেদ আলম বিপ্লব

গত ২৮শে মার্চ ২০১৯ ঘটে যাওয়া বনানীতে এফ আর টাওয়ার এ অগ্নিকাণ্ডে যখন ২২ তলা বিল্ডিং এর বিভিন্ন ফ্লোর থেকে বিপদগ্রস্ত মানুষগুলো একটু বেঁচে থাকার তাগিদে হাতছানি আর কাপড় হাতে নিয়ে উদ্ধারের জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন, তখন আমাদের যৌথ উদ্ধারকর্মীরা তাদের কর্তব্য পালনে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। একদিকে হাজারো মানুষের ভিড়, আত্মীয়-পরিজয়ার জন্য ব্যাকুল চিত্তে কান্না বিজড়িত ছোটাছুটি, আর অন্যদিকে কিছু নির্বোধ মানুষ রুপি জানোয়ার হাস্যোজ্জ্বল মুখে সেলফি তুলতে ব্যস্ত। কি নিদারুন বেদনাহত অার্তনাদ চারদিকে,আর বিল্ডিং এর উপড় থেকে হাতে কাপড় দিয়ে বার বার একটু বাঁচার আকুতি নিয়ে সবার কাছে উদ্দ্বারের আহ্বান। কি নির্মম পরিবেশ আর অনুভূতি, সত্যি বলার কোনো ভাষা নেই। রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনীর উদ্ধারকর্মী এবং বিভিন্ন কলেজের ছাত্র ও কিছু সংগঠনের মানষ প্রেমিকরা যখন প্রানপনে চেষ্টা চালাচ্ছেন উপড়ে আটকে পরা বিপদগ্রস্ত মানুষদের উদ্দ্বারের জন্য, তখন তাদের কাজে বার বার ব্যঘাত ঘটাচ্ছিলো ঐ নরপশু গুলো যারা রাস্তায় হুলস্থুলের মাঝে সেলফিতে ব্যস্ত।
হঠাৎ এর মাঝে দেখা গেলো পানির লম্বা পাইপের একজায়গায় লিকেজ দেখে ঐখানে পলিথিন পেঁচিয়ে নয়, দশ বছরের এক বালক তার উপর বসে উপরের দিকে তাকিয়ে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বার বার আল্লাহকে ডাকছেন। তার এই অকৃত্রিম ভালোবাসা মহৎ উদ্যোগ আর জীবন বাজি সকলের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, যা সকল নির্বোধ অমানুষদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন কিভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হয়।
সে বাংলার গৌরব, অর্থাভাবে দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে ওঠা মিরপুর কড়াইল বস্তি এলাকার বউবাজার আনন্দ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র নাঈম। বাবা রুহুল আমিন গর্বিত একজন পিতা।মানবতা আর ভালোবাসার প্রতীক নাঈম,কাল নিজের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাতে পুরো দুনিয়াকে বুঝিয়েছে মানবতা আর মানষ প্রেম কাকে বলে। নাঈমের এই অদম্য ভালোবাসা আর সাহসী প্রচেষ্টার কাছে হাজারো হাজারো সেলফিবাজরা আজ ধিক্কিত।
দিন শেষে পত্রিকার পাতায় আর টেলিভিশনে যখন দেখি ২৫ টি লাশের খবর শিউরে ওঠে মন। কান্নায় স্তব্দ হয়ে যাচ্ছে আকাশ বাতাস যখন লাশবাহী গাড়িটি বাড়ির আঙিনায় পৌছে সেই নিষ্পাপ দেহখানী নিয়ে।
নির্বাক মানুষগুলোকে সান্ত্বনার ভাষা আজ জানা নেই, শুধু বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানদের ধৈর্য ধরার শক্তি দাও আল্লাহ, আর যে সকল মানুষ গুলো কর্মের তাগিদে এসে শহীদ বরণ করল আল্লাহ তাদের জান্নাত বাসী করুন। আমিন।
একটি সংবাদে কিছুটা খুশি হলেও এদেশের বিত্তবান দের উদাসীনতায় মর্মাহত হয়েছি, সুদুর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওমর ফারুক সামী যখন নাঈমের কাজে খুশি হয়ে ওর বড় হয়ে পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন জানতে পেরে পড়াশোনার দায়িত্ব গ্রহন করলেন, এবং তার পাশাপাশি ৫০০০ ডলার তার পরিবারকে দেয়ার ঘোষণা দিলো তখন সিলেটের গোপালগন্জের সেই মহৎ ভাইটির জন্য প্রার্থনা, আল্লাহ যেন তাকে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সহযোগিতাএবং দীর্ঘায়ু দান করেন।
অন্যদিকে দুঃখের পাশাপাশি ঘৃণা প্রকাশ করছি সেই সকল বিত্তবানদের যারা অন্যায়ভাবে নিয়ম না মেনে বিশাল ইমারত তৈরী করে হাজারো মানুষকে বার বার মৃত্যুর ফাঁদে ফেলেছেন, আর তাদের সাথে যারা অন্যায় ভাবে নিয়মের বাইরে ইমারত তৈরী করতে সহায়তা করেছেন সেইসব নির্লজ্জ্বদের কে ও ধিক্কার।
এইযে এফ আর টাওয়ার ১৮ তলার অনুমতি নিয়ে ২২ তলা বানালো, এত বড় স্থাপনাটায় কোনো ফায়ার এক্সিট নাই, তাহলে রাজউক এতদিন কি করেছে ? পাশের প্রায় সবগুলো বিল্ডিং একইভাবে গায়ে গা লাগিয়ে কোনো জায়গা না ছেড়ে সকল নিয়ম ভঙ্গ করে মাথা চাড়া দিয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে রাজউক কি অনুমতি দিয়েছে? কেন দিয়েছে এরকম অনিয়মে বেড়ে ওঠার? আর যদি না দিয়ে থাকে তাহলে এগুলোর প্রতিকার করছে না কেন? এই অসৎ কর্মকর্তাদের জন্য কি শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে? আমিতো বলবো আগুনে পুড়ে এই ঘটনায় যারা মারা গেলো তাদের আসলে হত্যা করা হয়েছে এবং এই হত্যার দায় ওইসব অসৎ ব্যক্তিদের যারা বিনা বিবাদে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার কথা না ভেবে পরম অবিবেচকের মত আখের গুছিয়ে চলেছেন।
মেয়র মহোদয় এবং সর্বপরি মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নিকট আমার আকুল আবেদন, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্দ্বে যথাযথ ব্যবস্হা করার জন্যে। যাতে করে এই সকল অসৎ ব্যক্তিদের বা কর্মকর্তারই সন্তান বা স্ত্রী বা ঘনিষ্ঠ কোনো মানুষ একদিন এরকম মর্মান্তিক কোনো পরিনতি বরন করতে না হয়।
« মতলব দক্ষিণে ১০০ পিস ইয়াবা সহ আটক ১ (Previous News)
Related News

সিদ্ধিরগঞ্জে আজকের কালের চিত্র পত্রিকার উদ্যোগে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
সিদ্ধিরগঞ্জের দৈনিক আজকের কালের চিত্র পত্রিকার উদ্যোগে ইফতার, দোয়া ও মাহফিল অনুষ্ঠিত। গতকাল মঙ্গলবার শিমরাইলRead More

অকুতোভয় এক মানবতার প্রতীক নাঈম : মোঃ খোরশেদ আলম বিপ্লব
গত ২৮শে মার্চ ২০১৯ ঘটে যাওয়া বনানীতে এফ আর টাওয়ার এ অগ্নিকাণ্ডে যখন ২২ তলাRead More
Comments are Closed