March 29, 2024, 1:25 pm

সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় ফুটপাতসহ বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণে নিতে নব-কমিটি

সিদ্ধিরগঞ্জ (২৮’মার্চ ২৩’ইং মঙ্গলবার) ঃ সিদ্ধিরগঞ্জে শিমড়াইল মোড়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন ফুটপাতসহ বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ নিতে ‘বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন’র সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটি নামে ১৮’সদস্য বিশিষ্ট নব কমিটির আবির্ভাব হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা ইতিমধ্যে শিমড়াইল মোড়ে পানি উন্নয়ণ বোর্ডের জায়গায় নিজেদের কার্যালয়ের নামে একটি ঘর নির্মাণ করেছে। তবে পূর্বে থেকেই হকারদের সংগঠন রয়েছে বলে জানিয়েছে শিমরাইলের একাধিক দোকানদার। নতুন করে হকারদের কাছ চাঁদাবাজির নতুন কৌশল এটেছে এই নব কমিটি বলে অভিযোগ হকারদের। বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে থেকে বিভিন্ন সময় বেশ চাঞ্চল্যেও সৃষ্টি করে বিতর্কীত নেতা হিসেবে ইতিমধ্যেই টুটুল বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন’র সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবারও আরেকটি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে টুটুল। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র ও বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এর ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শিমড়াইল মোড়ের হকার ও ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, শিমরাইল মোড়ে অবস্থিত পানি উন্নয়ণ বোর্ডেও জায়গায় সংগঠনটি উক্ত কমিটির কার্যালয় স্থাপন করেছে। উক্ত কমিটির মূল পরিচালনাকারী সে নিজেই। তাকে মামলাবাজ টুটুল নামে অবিহিত করা হয়ে থাকে। সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের চাটুকারী করে আওয়ামী ওলামালীগ থেকে শুরু করে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ও বিভিন্ন পরিবহন সংগঠনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্ত বানোয়াট অভিযোগ এবং মামলা দিয়ে হয়রানীর মাধ্যমে স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হয়ে পুনরায় বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন নিয়ে হাজির হয়েছে নোমান হোসেন টুটুল। আর এই কমিটির মাধ্যমে নিজের উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠা করতে আওয়ামলীলীগের নেতাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
জানা যায়, কয়েক মাস আগে শিমরাইল ট্রাক স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজীর নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সিদ্ধিরগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী নূর হোসেনের ছোট ভাই বাংলাদেশ আন্তঃজিলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন শিমরাইল শাখার সভাপতি নূরুজ্জামান জজের বিরুদ্ধে সেই নোমান হোসেন টুটুল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন দপ্তর থেকে শুরু করে জেলা পুলিশ সুপার পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে দায়িত্ব দেয়। পরবর্তীতে দৈনিক দুই হাজার পাঁচশত টাকা চাঁদা পাওয়ার আশ্বাসে জজের সাথে তার সমঝোতা হয়। বিষয়টি ট্রাক ড্রাইভারস ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটিতে জানাজানি হয়ে গেলে কপাল পোড়ে তার। অবশেষে বহিস্কার করা হয় সেই সংগঠন থেকে। তার গ্রামের বাড়ি মতলব হওয়ায় সে এলাকার আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদেরকে ব্যবহার করে এই চতুর ব্যক্তি নিজেকে আওয়ামীলীগার হিসেবে জাহির করে আধিপত্য বিস্তার করে স্বার্থ হাসিলের পায়তারা চালায়। নিজের আখের গোছাতে শুরু করে নতুন পরিকল্পনা। এ ঘটনার কয়েক মাস যেতে না যেতেই নূরুজ্জামান জজের প্রধান দুই সহযোগী সফিউজ্জামান লিটন ও ফারুকে হোসেনকে সাথে রেখে একই কমিটি গঠন করে আবারও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় সূত্র মতে, এর আগে টুটুল শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালে অবস্থিত ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতিতে নিজে ট্রাক কাভার্ড ভ্যানের মালিক না হয়েও শিমরাইল শাখার সেক্রেটারী হয়ে যায়। মালিক না হয়েও সমিতির দায়িত্বে থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে অপচেষ্টা করলে সমিতির সদস্যরা তাকে সংগঠন থেকে বিতারিত করে। কিছুদিন নিরব থাকার পর শিমরাইলের ধনু মেম্বারের ছেলে মনিরের শেল্টারে ট্রাক টার্মিনালের আশে-পাশে ট্রাক ড্রাইভারস ইউনিয়ন (রেজিঃ নং-৬২৩) নামে একটি সংগঠন নিয়ে হাজির হয় টুটুল। তখন থেকেই ট্রাক টার্মিনাল নিয়ে প্রথমে টেকপাড়ার দেলোয়ার পরে নুর হোসেনের ছোট ভাই নুরুজ্জামান জজের সাথে টুটুলের দ্বন্দ শুরু হয়। পেছন থেকে তাকে কিছু প্রভাবশালী মহল শেল্টার দিচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোমান হোসেন টুটুল জানান, আমি কোন চাঁদাবাজী করতে বসিনি। চাঁদাবাজী নিয়ন্ত্রনের জন্য এই সংগঠন করেছি। এছাড়া উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছে আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা দানকারী ইলিয়াছ মোল্লা। পূর্বে যে র‌্যাবের হাতে চাঁদাবাজির অপরাধে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছে। কমিটির এছাড়া রয়েছ মুরগী রিপন@চাঁদাবাজ রিপন। যার নামে চাদাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে। নূরুজ্জামান জজের প্রধান সহযোগী সফিউজ্জামান লিটন উক্ত কমিটির সভাপতি। আরেক সহযোগী ফারুক হোসেন কমিটির কোষাধ্যক্ষ। সফিউজ্জামান লিটন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারের পিএস পরিচয় দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজী সহ সকল প্রকার অপকর্মের মূলহোতা ছিলেন। সাত খুনের পর তিনি এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিলেও পরবর্তীতে তিনি নূরুজ্জামান জজের প্রধান সহযোগী হিসেবে শিমড়াইল মোড়ে সকল অপকর্মের নেতৃত্ব হাতে তুলে নেয়।
অপরদিকে ফারুক হোসেন সোনারগায়ের কাঁচপুর কুতুবপুর এলাকার বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে জুট সন্ত্রাসীসহ এলাকায় সন্ত্রাসী- চাঁদাবাজির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এক সময় তার অপকর্মের কারণে এলাকাবাসী ফুসে উঠে তার বিরুদ্ধে তাদের বাড়িঘওে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে এলাকা থেকে তাকে বিতারিত করে। এরপর থেকে তিনি বেশকিছু দিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকেন। পরবর্তীতে সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকায় বসবাস শুরু করেন। সুযোগ বুঝে নূরুজ্জামানা জজের সাথে ধীরে ধীরে সখ্যতা গড়ে তোলে। বর্তমানে সফিউজ্জামান লিটন ও ফারুক হোসেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পুরো শিমরাইল এলাকা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানায়, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নতুন সংগঠনের নামে সফিউজ্জামান লিটন ও ফারুক হোসেন নতুন মিশনে নেমেছে। তারা হকারদের কাছ থেকে কোটি টাকা চাঁদাবাজির জন্যই বিভিন্নভাবে আমাদের চাপ প্রয়োগ করছে। এতে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। শিমড়াইল এলাকায় আমরা ব্যবসা করতে পারবো কিনা, এ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।
এ বিষয়ে জানতে ‘বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন’ এর সভাপতি সফিউজ্জামান লিটন ও কোষাধ্যক্ষ ফারুক হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ বুধবার রাতে ‘বাংলাদেশ হকার্স ফেডারশন’ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটি কার্যালয়ের উদ্বোধন করার জন্য সকল হকারদেও চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়া হয়। পরে পুলিশের বাধায় আর উদ্বোধণ করা হয়নি। ২৬ মার্চ রোববার রাতে উক্ত ফেডারেশনের কার্যালয় স্থাপন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ বাধে। এক পক্ষ কার্যালয় ভেঙে দিলে অপরপক্ষ ৯৯৯ এ কল করলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, উক্ত কমিটির কার্যালয় নির্মাণকে ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। #####

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা